আলমগীর কবীর
মরার উপর খড়ার ঘাঁ বাড়িভাড়া,দোকানভাড়া,বিদ্যুৎবিল,গ্যাসবিল।সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দৈনন্দিন রুজিরুটির মানুষগুলো এখন বেকায়দায় । কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ছুটি দীঘস্থায়ী হলে সমস্যা আরও বেশি হবে এমন ধারনা করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
একজন দুরপাল্লার বাস চালক মোঃসাদেক বলেন গত ১১দিন ঘরবন্দি, চলতি এপ্রিল ২০২০ ইং মাসের বাড়িভাড়া,গ্যাসবিল,বিদ্যুৎবিল কিভাবে দিব সেটাই এখন চিন্তার বিষয় ? একজন হোটেল মালিক বলেন চলতি মাসের দোকান ভাড়া ,বাসা ভাড়া ,স্টাফদের বেতন ,গ্যাসবিল,বিদ্যুৎবিল দিতে পারবো কি না জানি না ,ভীষন দুশ্চিন্তায় আছি । চা-বিস্কুট বিক্রেতা মিঃমামুন বলেন লকডাউন অবস্থায় আজ ১১দিন দোকান খুলতে পারছি না । দোকানভাড়া,বাসাভাড়া,বিদ্যুৎবিল,গ্যাসবিল ইত্যাদি কিভাবে পরিশোধ করবো একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন ?
পুরোবিশ্বে চলমান করোনার ভাইরাস মোকাবেলায় নিম্নবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশই অসহায়। স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার নেই। ফলে একদিকে খাবার কিনতেও পারছেন না, অপরদিকে সামাজিক মর্যাদার কারণে কারও কাছে চাইতেও পারছেন না। নীরবেই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। ৫টি মৌলিক চাহিদার ৪টি নিয়ে চিন্তিত তারা। বিশেষ করে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে তারা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দিন গুনছে ।
অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ৮০০ থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে, তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে তাদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও মানদণ্ডে আনতে হবে। এরা ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা এবং দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। করোনার কারণে দেশ লকডাউন হওয়ায় বর্তমানে এদের বড় অংশের আয়-রোজগার বন্ধ। এতে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা । বিশেষ করে গণপরিবহন বাস চালক ,চা-বিস্কুট বিক্রতা ,হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট মালিক ,পোশাক শিল্প কারখানা চাকুরীজিবীরা ।
একজন বিল্ডিংয়ের রংমিস্ত্রী গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় বাসাভাড়া নিয়ে সপরিবারে থাকেন । স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু লকডাউনের গত ২৪ মার্চ থেকে তার কাজকর্ম বন্ধ। ফলে তার আয় নেই। জানালেন তার বাসায় বাজার নেই। সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এ মাসের বাসা ভাড়া নিয়ে।
গরিব মানুষের জন্য প্রান্তিকভাবে এক ধরনের ব্যবস্থা থাকছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিকাশমান মধ্যবিত্তরা সব সময় চাপে থাকে। তাদের মতে, রাজনীতিবিদরা ভোটের কারণে নিম্নবিত্তদের গুরুত্ব দেন। আবার নির্বাচনের টাকা সংগ্রহের জন্য সম্পদশালীদের গুরুত্ব দেন। কিন্তু মধ্যবিত্তকে মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানও নেই। আর করোনার মতো দুর্যোগে তাদেরকে বেশি বিপদে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে খাবারের পাশাপাশি বাসাভাড়া নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন মধ্যবিত্তরা।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রিপোর্টে বলা হয়, বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করছে না বাড়ির মালিকরা। বাড়ির মালিকদের স্থানীয় সমিতিগুলোই ভাড়া নির্ধারণ করছে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ বাড়ির মালিক মাসের ভাড়া আগাম নেয়। সে কারণে এপ্রিল মাসের ভাড়া নেয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু অনেকে এ মাসের বেতন পাবেন না। ফলে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন বলে জানান।